বৈশেষিক দর্শন (বিদ্যোদয় ভাষ্য) - পণ্ডিত উদয়বীর শাস্ত্রী

Arsh Library: বৈশেষিক দর্শনের হিন্দি ভাষ্য PDF এখন বিনামূল্যে ডাউনলোড করুন। প্রাচীন ভারতীয় দর্শনের সহজ ভাষায় ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ এক ক্লিকে পড়ুন।

বৈশেষিক দর্শন - বিদ্যোদয় ভাষ্য

পণ্ডিত উদয়বীর শাস্ত্রী

বেদ সনাতন সংস্কৃতির মূল আধার এবং পরমাত্মার দিব্য জ্ঞান। প্রাচীন ও অর্বাচীন সকল ঋষিমুনি বেদের স্তুতি করেছেন। সৃষ্টির আদিতে পরমাত্মা চার ঋষির মাধ্যমে মানবজাতির কল্যাণে বেদের জ্ঞান প্রদান করেছেন। এই জ্ঞান কোনো নির্দিষ্ট জাতি বা কালের জন্য নয়, বরং এটি সার্বভৌম, সার্বজনীন ও সার্বকালিক। আজ আমরা পণ্ডিত জয়দেব শর্মা কৃত ঋগ্বেদের সম্পূর্ণ হিন্দি ভাষ্য নিয়ে আলোচনা করব।

person ভাষ্যকার পরিচিতি

দর্শন শাস্ত্রের অভূতপূর্ব বিদ্বান পণ্ডিত উদয়বীর শাস্ত্রী ১৮৯৫ সালের ৬ জানুয়ারী, রবিবার বুলন্দশহর জেলার বনৈল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার প্রারম্ভিক শিক্ষা সংগ্রামের সময় শুরু হয়। তারপর ৯ বছর বয়সে ১৯০৪ সালের জুলাই মাসে তাকে সিকান্দারবাদ গুরুকুলে ভর্তি করানো হয়। পুনরায় উচ্চ শিক্ষার জন্য ১৯১০ সালে তিনি জ্বালাপুর মহাবিদ্যালয় গুরুকুলে ভর্তি হন। পুনরায় তিনি কোলকাতা থেকে (১৯১৫/১৯১৬) সালে ন্যায়তীর্থ তথা সাংখ্য-যোগতীর্থ পরীক্ষা উত্তীর্ণ হন। পুনরায় তিনি পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শাস্ত্রী, বানারস থেকে বেদান্তাচার্য, গুরুকুল বিশ্বদ্যিালয় থেকে বিদ্যাভাস্কর আদি পরীক্ষাতেও সফলভাবে উত্তীর্ণ হন। তাকে জ্বালাপুর বিশ্বদ্যিালয় গুরুকুল থেকে বিদ্যাবাচস্পতি উপাধী প্রদান করা হয়। জগন্নাথপুরীর ভূতপূর্ব শঙ্করাচার্য শ্রী ভারতী কৃষ্ণতীর্থ মহাশয় তার অপার পাণ্ডিত্য দেখে তাকে বেদরত্ন তথা শাস্ত্র শেবধি উপাধীতে ভূষিত করেন।

auto_stories বই পরিচিতি

বৈশেষিক দর্শনের প্রবর্তক মহর্ষি কণাদের প্রণীত সূত্র হলো: "অথাতো ধর্মং ব্যাখ্যাস্যামঃ" (বৈশেষিক দর্শন ১.১.১)। এই সূত্রে 'ধর্ম' শব্দটি দ্বারা মহর্ষি মনু কর্তৃক (মনুসংহিতা ৬.২) বর্ণিত 'ধৃতি, ক্ষমা, দম, অস্তেয়, শৌচ, ইন্দ্রিয়নিগ্রহ, ধী, বিদ্যা, সত্য ও অক্রোধ'—এই দশটি গুণ উদ্দেশ্য নয়। এখানে 'ধর্ম' বলতে ছয়টি পদার্থের (দ্রব্য, গুণ, কর্ম, সামান্য, বিশেষ ও সমবায়) বৈশিষ্ট্যই বোঝানো হয়েছে। কণাদের সূত্রগুলিতে আলোচিত বিষয়বস্তুর ভিত্তিতে এই প্রসঙ্গে 'ধর্ম' শব্দের এই অর্থই গ্রহণ করা উচিত। শ্রী পণ্ডিত উদয়বীর শাস্ত্রীও তাঁর এই ভাষ্যে এই অর্থই গ্রহণ করেছেন, যদিও বৈশেষিক দর্শনের অন্যান্য ভাষ্যকাররা সাধারণত 'ধর্ম' শব্দের অর্থ 'সদাচার' বা 'শ্রেষ্ঠাচার' ইত্যাদি করে থাকেন। বাস্তবিকপক্ষে, বৈশেষিক দর্শনে আলোচিত বিষয়বস্তুকে বিবেচনায় নিলে 'ধর্ম' শব্দের সদাচারমূলক অর্থ এখানে একেবারেই অপ্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।

বৈদিক যুক্তিবিনিময়ে ন্যায়দর্শনের চিন্তাপদ্ধতি এবং বৈশেষিক দর্শনের মননপ্রক্রিয়া—উভয়ই একই ধারার অন্তর্গত। ন্যায়দর্শন ও বৈশেষিক দর্শনকে এই কারণে একে অপরের সমশাস্ত্র বলা হয়, যেন এরা উভয়েই কোনো এক সাধারণ অর্থকে ব্যাখ্যা করতে পরস্পরকে সহায়তা (পূরক) করে। সেই 'সাধারণ অর্থ' হলো—"জগতের রহস্য", যা দেখে মানুষ বিস্মিত হয়ে যায় এবং ক্লান্ত হয়ে না চাইলেও বারবার ভাবতে বাধ্য হয়: এই গোলকধাঁধা কী? কীভাবে এটি তৈরি হয়েছে? কে এটি তৈরি করেছে? এখানে আমার স্থান কোথায়? আমার কর্তব্য কী? এবং কী অকর্তব্য? এই সমস্ত চিন্তাভাবনার মূল ভিত্তি হলো সেই অভিজ্ঞতা, যা মানুষ ইন্দ্রিয় (স্ব-ইন্দ্রিয়) ও বিষয় (জগতের পদার্থ) এর সংযোগ থেকে লাভ করে। এই ইন্দ্রিয়ার্থসংযোগজাত অভিজ্ঞতার বিশ্লেষণপ্রক্রিয়া হলো ন্যায়দর্শনের বিষয়, আর সেই বিশ্লেষণ থেকে প্রাপ্ত জগতের পদার্থসমূহের জ্ঞান হলো বৈশেষিক দর্শনের বিষয়। বৈশেষিক দর্শন পদার্থ ও তাদের ধর্মের উল্লেখ, সংগঠন ও স্বরূপবিবেচনা করে। ন্যায়দর্শন সেই পদার্থ ও তাদের ধর্মগুলোকে জানার প্রক্রিয়ার বিস্তৃত ব্যাখ্যা প্রদান করে। ন্যায়দর্শন 'প্রমাণ'-এর বিশদ আলোচনা, আর বৈশেষিক দর্শন পদার্থ ও তাদের গুণাবলীর গভীর বিশ্লেষণমাত্র। এভাবে সংক্ষেপে বলা যায়, মহর্ষি কণাদের উদ্দেশ্য হলো—জগতের পদার্থগুলোর ধর্মের বিবেচনা করে তাদের স্বরূপ নির্ণয় করা। আর এটি করা হয় এইজন্য, যাতে পদার্থগুলোর সত্যস্বরূপ জানার মাধ্যমে সংসার-যজ্ঞের উন্নতির জন্য তাদের যথাযথভাবে সংযুক্ত করে মানুষের অভ্যুদয় (ঐহিক উন্নতি) ও নিঃশ্রেয়স (পারলৌকিক সুখ) এর পথ প্রশস্ত করা যায়।

এই বৈশেষিক দর্শনের 'বিদ্যোদয়' ভাষ্যের বিশেষত্ব হলো—প্রখ্যাত ভাষ্যকার মূলগ্রন্থকে প্রাথমিক পদার্থবিদ্যার বিবরণমূলক গ্রন্থ হিসেবে বিবেচনা করে, প্রথাগত ভাষ্যপদ্ধতির আশ্রয় না নিয়ে, মূলসূত্রের শব্দগুলিকে তাদের প্রাসঙ্গিক অর্থে মেলানোর মাধ্যমে দর্শনকারকের প্রকৃত অভিপ্রায়কে বিদ্বান পাঠকদের সামনে উপস্থাপনের প্রশংসনীয় প্রয়াস করেছেন। এই ভাষ্যে ধর্মের ছোঁয়া থাকলেও এটি কেবল ধর্মীয় প্রেরণায় লেখা গ্রন্থ নয়। এর উদ্দেশ্য হলো—লোকে পদার্থের মৌলিক ধর্মগুলিকে প্রচার করে তাদের বাস্তব স্বরূপ হৃদয়ঙ্গম করানো। পাঠক এই উদ্দেশ্যকে সমগ্র ভাষ্য জুড়ে—শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ধীরে ধীরে অগ্রসর হতে দেখবেন।

মহর্ষি দয়ানন্দ আর্য সমাজের প্রথম নিয়মে লিখেছেন: "সকল সত্যবিদ্যা এবং যে সমস্ত পদার্থ বিদ্যা দ্বারা জানা যায়, তাদের আদি ও মূল হলো পরমেশ্বর।" একইভাবে, তৃতীয় নিয়মে তিনি লিখেছেন: "বেদ সকল সত্যবিদ্যার গ্রন্থ।" ঠিক এই একই চিন্তা বৈশেষিক দর্শনে "তদ্বচনাদাম্নায়স্য প্রামাণ্যম্" (১.১.৩) এই সূত্রে মহর্ষি কণাদও ঘোষণা করেছেন। এই সূত্রের অর্থ হলো—"সেই ধর্মের (জগতরূপে বিস্তৃত দ্রব্যাদির ধর্ম) বর্ণনা থেকে আম্নায় (বেদ)-এর প্রামাণ্য প্রতিষ্ঠিত হয়।" অর্থাৎ, "জগৎরূপী দ্রব্যাদি পরমেশ্বরেরই সৃষ্টি। এই সৃষ্টির অনুরূপ বেদেও এর বর্ণনা রয়েছে। এই ভিত্তিতেই বেদও পরমেশ্বরের রচনা বলে মান্য। পরমেশ্বর ছাড়া এমন কে আছে, যিনি পরমেশ্বরের সৃষ্টি জগতের এত সঠিক ও বিশদ বর্ণনা দিতে পারেন, যেমন বেদে দেওয়া হয়েছে? এ থেকে স্বতঃই প্রমাণিত হয় যে, জগতের মতো বেদও পরমেশ্বরেরই রচনা। এই কারণে বেদ স্বতঃপ্রমাণ।"

শেষে (বৈশেষিক দর্শন ১০.২.১৮-এ) "তদ্বচনাদাম্নায়স্য প্রামাণ্যমিতি" সূত্রটি পুনরুক্তি করে মহর্ষি কণাদ যেন ঘোষণা করছেন—"জগতরূপে বিস্তৃত পদার্থাদির ধর্মের বিবরণ আমরা এখানে দার্শনিক পদ্ধতিতে আম্নায় (বেদ)-এর ভিত্তিতে বিশদভাবে দিয়েছি। যেহেতু এই বর্ণন বিশ্ববাস্তুতত্ত্বরূপ, অর্থাৎ জগতের বাস্তব অবস্থার সাথে সম্পূর্ণ সামঞ্জস্যপূর্ণ, তাই এই জগৎ ও আম্নায় (বেদ)-এর স্রষ্টা অবশ্যই একই সত্তা হতে হবে। সেই স্রষ্টা সচ্চিদানন্দ পরব্রহ্ম ছাড়া আর কেউ নন। এভাবেই বেদের স্বতঃপ্রামাণ্য প্রতিষ্ঠিত হয়।"

আমরা সম্পূর্ণ সন্তুষ্ট যে, শ্রী পণ্ডিত উদয়বীর শাস্ত্রী তাঁর এই গ্রন্থে মহর্ষি দয়ানন্দের এই চিন্তাধারা পূর্ণরূপে রক্ষা করেছেন। ভাষ্য রচনাকালে তিনি বিভিন্ন স্থানে বৈদিক উদ্ধৃতির মাধ্যমে সূত্রের অন্তর্নিহিত অর্থ স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রকাশ করেছেন।

info বইয়ের বিস্তারিত তথ্য
edit
লেখক:মহর্ষি কণাদ
book
প্রকাশনী:বিজয়কুমার গোবিন্দরাম হাসানন্দ
calendar_month
প্রকাশকাল:২০১৭ খ্রিষ্টাব্দ
wysiwyg
পৃষ্ঠা সংখ্যা:৪৮৮
translate
ভাষা:হিন্দি
description
ফরম্যাট:PDF
save
ফাইল সাইজ:২২.১ MB

downloadডাউনলোড করুন

আপনার পছন্দের ফরম্যাটে বইটি ডাউনলোড করতে নিচের বাটনে ক্লিক করুন:

(ডাউনলোড লিঙ্ক কাজ না করলে বা কোনো সমস্যা হলে অনুগ্রহ করে মন্তব্য করুন।)