যোগ দর্শন (বিদ্যোদয় ভাষ্য) - পণ্ডিত উদয়বীর শাস্ত্রী

Arsh Library: যোগদর্শন বা পতঞ্জলি যোগসূত্রের সহজ ও বিশ্লেষণমূলক হিন্দি ব্যাখ্যা সহ পিডিএফ ডাউনলোড করুন। Patanjali Yog Darshan Hindi pdf,

যোগ দর্শন - বিদ্যোদয় ভাষ্য

ভাষ্যকারঃ পণ্ডিত উদয়বীর শাস্ত্রী

ভূমিকাঃ প্রাচীন ভারতীয় ঋষি-মুনিরা যেমন জগতের রহস্য উদ্‌ঘাটনে পারদর্শিতা দেখিয়েছেন, তেমনি আধ্যাত্মিকতার শীর্ষতলে পৌঁছানোর পথও নির্দেশ করেছেন। এই আধ্যাত্মিক সাধনার সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি হল পতঞ্জলি প্রণীত যোগদর্শন, যেখানে অষ্টাঙ্গ যোগকে জীবনের মুক্তির সোপান হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। যম, নিয়ম, আসন, প্রাণায়াম, প্রত্যাহার, ধারণা, ধ্যান ও সমাধি—এই আটটি অঙ্গের অনুশীলনে চিত্তের বিক্ষিপ্ততা দূর হয়ে জীবাত্মা পরমাত্মার সঙ্গে মিলনে উপনীত হয়। যোগশাস্ত্র মূলত অনুশীলনভিত্তিক দর্শন, যা নৈতিকতা, শারীরিক নিয়ন্ত্রণ ও মানসিক একাগ্রতার সমন্বয়ে আত্মিক মুক্তির দিশা দেখায়। এর ব্যাখ্যা বোঝার জন্য বিভিন্ন ভাষ্য রচিত হলেও সাধারণ মানুষের কাছে সহজ ও প্রাঞ্জল ভাষ্যে উপস্থাপন ছিল জরুরি। এই প্রয়োজন পূরণে আচার্য পণ্ডিত শ্রী উদয়বীর শাস্ত্রীর বিদ্যোদয় ভাষ্য যোগসূত্রের সূক্ষ্ম তত্ত্বকে সহজবোধ্য ও প্রয়োগযোগ্য করে তুলেছে। নিঃসন্দেহে এই ব্যাখ্যা যোগসাধক ও চিন্তাশীল পাঠকদের জন্য এক অমূল্য সহায়ক।

person ভাষ্যকার পরিচিতি

দর্শন শাস্ত্রের অভূতপূর্ব বিদ্বান পণ্ডিত উদয়বীর শাস্ত্রী ১৮৯৫ সালের ৬ জানুয়ারী, রবিবার বুলন্দশহর জেলার বনৈল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার প্রারম্ভিক শিক্ষা সংগ্রামের সময় শুরু হয়। তারপর ৯ বছর বয়সে ১৯০৪ সালের জুলাই মাসে তাকে সিকান্দারবাদ গুরুকুলে ভর্তি করানো হয়। পুনরায় উচ্চ শিক্ষার জন্য ১৯১০ সালে তিনি জ্বালাপুর মহাবিদ্যালয় গুরুকুলে ভর্তি হন। পুনরায় তিনি কোলকাতা থেকে (১৯১৫/১৯১৬) সালে ন্যায়তীর্থ তথা সাংখ্য-যোগতীর্থ পরীক্ষা উত্তীর্ণ হন। পুনরায় তিনি পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শাস্ত্রী, বানারস থেকে বেদান্তাচার্য, গুরুকুল বিশ্বদ্যিালয় থেকে বিদ্যাভাস্কর আদি পরীক্ষাতেও সফলভাবে উত্তীর্ণ হন। তাকে জ্বালাপুর বিশ্বদ্যিালয় গুরুকুল থেকে বিদ্যাবাচস্পতি উপাধী প্রদান করা হয়। জগন্নাথপুরীর ভূতপূর্ব শঙ্করাচার্য শ্রী ভারতী কৃষ্ণতীর্থ মহাশয় তার অপার পাণ্ডিত্য দেখে তাকে বেদরত্ন তথা শাস্ত্র শেবধি উপাধীতে ভূষিত করেন।

auto_stories বই পরিচিতি

প্রাচীন ভারতীয় ঋষি-মুনিরা যেমন পার্থিব জগতের অনুসন্ধান করেছেন, তেমনি তাঁরা আধ্যাত্মিক জগতের অতুলনীয় রহস্য উদ্‌ঘাটনেও প্রশংসনীয় সাফল্য অর্জন করেছেন। ভারতীয় সাহিত্যে আধ্যাত্মিকতার যতো উচ্চস্তরের ও গুরুত্বপূর্ণ বিশ্লেষণ পাওয়া যায়, তা বিশ্বের অন্য কোনো সাহিত্যে দেখা যায় না। বৈদিক সাহিত্যের উপনিষদ অংশ একমাত্র এই বিষয়কেই বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উপস্থাপন করে। এই ধারাতেই মহর্ষি পতঞ্জলি-প্রণীত 'যোগদর্শন' গ্রন্থটি রচিত, যা আধ্যাত্মিকতার শিখরে আরোহণের একমাত্র সিঁড়ি; এই সিঁড়ির আটটি ধাপ বা অঙ্গ রয়েছে, যেগুলির আশ্রয়ে একনিষ্ঠভাবে চর্চা করলে আধ্যাত্মিকতার সর্বোচ্চ স্তরে বাধাহীনভাবে পৌঁছানো যায়।

প্রত্যেক মানুষ সবসময় সুখ ও আনন্দের আকাঙ্ক্ষী থাকে। সংসারে বাস করে মানুষ নানা অবস্থায় এবং নানা রূপে সুখ অনুভব করে, কিন্তু পার্থিব উপায়ে প্রাপ্ত সুখে কোনো না কোনোভাবে দুঃখের সংমিশ্রণ থেকেই যায়। শরীর ও অন্যান্য বস্তুগত উপাদানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকায় সে সুখে স্থায়িত্ব ও ধারাবাহিকতা থাকে না। এক দুঃখ কাটলেও অন্য দুঃখ আসতে থাকে। স্থায়ী সুখ বা আনন্দ পাওয়া সম্ভব কেবল তার সংস্পর্শে, যিনি নিজেই আনন্দস্বরূপ। যোগদর্শনে ক্লেশ-কর্ম ইত্যাদি থেকে মুক্ত বিশেষ পুরুষকে 'ঈশ্বর' বলা হয়েছে। 'পুরুষ' শব্দটি জীবাত্মা ও পরমাত্মা—উভয়ের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। যেমন পরমাত্মা চৈতন্যস্বরূপ, তেমনি জীবাত্মাও চৈতন্যস্বরূপ। কিন্তু পরমাত্মা সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান, মহান, সত্যসঙ্কল্প এবং আনন্দময়; অন্যদিকে জীবাত্মা সীমিত জ্ঞানসম্পন্ন, ক্ষুদ্র ক্ষমতাসম্পন্ন, অণুরূপ এবং মিথ্যাজ্ঞান, রাগ-দ্বেষ, প্রমাদ ইত্যাদিতে আবদ্ধ ও সুখ-দুঃখ-মোহে বিভ্রান্ত। সুতরাং পরমাত্মা জীবাত্মার মতো চৈতন্যসত্তা হলেও ক্লেশাদি থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত থাকায় তিনিই ঈশ্বর রূপে পরমতত্ত্ব। উপনিষদে তাকেই বলা হয়েছে— 'আনন্দো বৈ ব্রহ্ম' (তৈত্তিরীয় উপনিষদ ৩.৬) এবং 'রসো বৈ সঃ' (তৈত্তিরীয় ২.৭)। তাকেই পেয়ে জীবাত্মা আনন্দময় হয়— 'রসং হ্যোবায়ং লব্ধ্বানন্দী ভবতি' (তৈত্তিরীয় ২.৭)। ঋগ্বেদ (৭.১১.১)-এ বলা হয়েছে— 'ন ঋতে ত্বদমৃতা মাদয়ন্তে' অর্থাৎ পরমেশ্বরকে লাভ না করলে জীব প্রকৃত আনন্দ থেকে বঞ্চিতই থেকে যায়। যজুর্বেদ (৩১.১৮)-এর ,'তমেব বিদিত্বাঽতিমৃত্যুমেতি নান্যঃ পন্থা বিদ্যতেঽয়নায়'- তাঁকেই জেনে অমৃতত্ব অর্থাৎ ঈশ্বরকে লাভ করা যায়, এছাড়া অন্য কোনো পথ নেই'— এই মন্ত্রেও একই বিষয় প্রতিধ্বনিত হয়েছে। তাই ব্রহ্মসাক্ষাৎকারই মানুষের জীবনের সমস্ত কর্মের লক্ষ্য হওয়া উচিত। একবার ব্রহ্মকে প্রত্যক্ষ করলে সে আনন্দে আপ্লুত হয়ে যায়। এই উদ্দেশ্য পূরণ শুধুমাত্র যোগের মাধ্যমেই সম্ভব। কেবল যোগের দ্বারাই মোক্ষরূপ পরমাদনন্দ লাভ করা যায়।

পতঞ্জলি-প্রণীত যোগসূত্র দর্শনের তাত্ত্বিক দিক এবং যোগের ব্যবহারিক দিক—দু'দিক থেকেই সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য গ্রন্থ। এটি মূলত একটি অনুশীলনভিত্তিক শাস্ত্র। যোগের অঙ্গগুলির সাধনাই এই বই অধ্যয়নের মূল উদ্দেশ্য। চিত্ত হচ্ছে তিনগুণসম্পন্ন, আর তার বিক্ষিপ্ততা রোধ করাই হল যোগ। চিত্তের পাঁচটি অবস্থা— ক্ষিপ্ত, মূঢ়, বিক্ষিপ্ত, একাগ্র ও নিরুদ্ধ। এর মধ্যে একাগ্র ও নিরুদ্ধ—এই দুইই যোগের অবস্থা। অভ্যাস ও বৈরাগ্যের দ্বারা চিত্ত প্রথমে একাগ্র ও পরে নিরুদ্ধ হয়। ওঁ-কার জপ এবং ঈশ্বরচিন্তন হলো ঈশ্বর-প্রণিধান। এর মাধ্যমে চিত্তে বিঘ্ন সৃষ্টি করা কারণসমূহ দূর হয়। তপ, স্বাধ্যায় ও ঈশ্বর-প্রণিধান মিলে ক্রিয়াযোগ হয়, যা অবিদ্যাদি পাঁচ ক্লেশ দূর করে।

অষ্টাঙ্গ যোগের আটটি অঙ্গ হল— যম, নিয়ম, আসন, প্রাণায়াম, প্রত্যাহার, ধারণা, ধ্যান ও সমাধি। এদের অনুশীলনের মাধ্যমে চিত্ত বিশুদ্ধ হয়ে প্রকৃতি-পুরুষের বিচ্ছেদজ্ঞান (বিবেক) লাভ হয়।

অহিংসা, সত্য ইত্যাদি পাঁচটি যম এবং শৌচ, সন্তোষ ইত্যাদি পাঁচটি নিয়ম—এই দশটির অনুশীলনে চিত্তের চঞ্চলতা দূর হয় এবং বিভিন্ন ধরনের সুখ লাভ হয়। নৈতিকতার সর্বোচ্চ প্রকাশ এই যম-নিয়ম। এইগুলির কঠোর অনুসরণ ছাড়া উচ্চতর যোগঅঙ্গের অনুশীলন সফল হয় না। শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ করা প্রাণায়াম, যার ফলে অশুদ্ধি দূর হয় ও মন ধারণার উপযোগী হয়। বাহ্যনির্ভর ইন্দ্রিয়সমূহকে অন্তর্মুখী করাই প্রত্যাহার, যার ফলে মনুষ্য ইন্দ্রিয়নিয়ন্ত্রী হয়ে ওঠে।

যোগের অন্তঃস্থিত তিন অঙ্গ হল— ধারণা, ধ্যান, সমাধি। চিত্তকে একটি নির্দিষ্ট স্থানে স্থির করা হলো 'ধারণা'। চিত্তের সেই স্থিরতায় একই চিন্তায় মন একাগ্র হলে তা 'ধ্যান'। যখন ধ্যাতা, ধ্যান এবং ধ্যেয়—এই তিনটির সমান প্রতীতি হয় তখন তা 'ধ্যান'। আর ধ্যেয় বিষয়ের প্রতি এত গভীর একাগ্রতা আসে যে, ধ্যাতা নিজের অস্তিত্ব ভুলে যায়—সে হল 'সমাধি'। এই অবস্থায় শুধু ধ্যেয়ের অস্তিত্ব অনুভব হয়, নিজের স্বতন্ত্রতা উপলব্ধি হয় না। এইরূপ একাগ্রতাই সমাধি। এই সমাধি লাভেই যোগের চূড়ান্ত লক্ষ্য পূরণ হয়।

যোগসূত্রের ব্যাখ্যা পরিষ্কারভাবে বোঝাতে বহু সংস্কৃত ভাষ্য রচিত হয়েছে—যেমন, 'ব্যাসভাষ্য', 'তত্ত্ববৈশারদী' (রচয়িতা: বাচস্পতি মিশ্র), 'যোগবার্তিক' (রচয়িতা: বিজ্ঞানভিক্ষু) ইত্যাদি। কালের প্রবাহে এই ভাষ্যগুলিও জটিল হয়ে গেছে। হিন্দি ভাষ্যগুলিও সাধারণ মানুষের নাগালে আসেনি, ফলে যোগের প্রকৃত রূপ হারাতে বসেছে এবং নানা ভুল ধারণা ছড়িয়ে পড়েছে। উদাহরণস্বরূপ, যোগদর্শনে কেবল এক ধরনের আসনের কথা বলা হয়েছে—যে অবস্থায় কেউ আরামে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকতে পারে, সেটাই আসন। কিন্তু আজ শরীরচর্চার ভঙ্গিগুলিকেও 'আসন' বলা হচ্ছে।

যোগের প্রকৃত রূপ জানার জন্য এবং তার সূক্ষ্মতত্ত্ব বোঝার জন্য পুরো যোগদর্শনের অধ্যয়ন আবশ্যক। এজন্য একটি এমন ব্যাখ্যা প্রয়োজন যা ব্যাখ্যামূলক হওয়ার পাশাপাশি সরল ও সুন্দর ভাষায় যোগের গূঢ়তত্ত্ব বোঝাতে পারে। আচার্য পণ্ডিত শ্রী উদয়বীর শাস্ত্রী দর্শনের বিশিষ্ট পণ্ডিত। তাঁর রচিত 'বিদ্যোদয় ভাষ্য' হল যোগসূত্রের ওপর তাঁর দীর্ঘকালীন মনন ও চিন্তনের ফল। এর মাধ্যমে তিনি যোগসূত্রের তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক দিক সফলভাবে পণ্ডিতসমাজ ও সাধারণ অনুসন্ধিৎসুদের সামনে উপস্থাপন করেছেন। সূত্রে ব্যবহৃত শব্দগুলিকে যথাযথ প্রাসঙ্গিক অর্থে বিবেচনা করে ব্যাখ্যা করায় এই ভাষ্য যোগবিদ্যার ক্ষেত্রে অত্যন্ত উপযোগী। এর পাঠে বহু জটিল সূত্রের গভীর অর্থ বোঝা যায় এবং যোগের মতো জটিল বিষয় সহজে হৃদয়ঙ্গম হয়। উপাসনার পদ্ধতি এবং অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে উদাহরণ থাকায় দর্শনে আগ্রহী ও যোগপথে চলতে ইচ্ছুক মুমুক্ষুদের কাছে এই 'বিদ্যোদয় ভাষ্য'-র দ্বিতীয় সংস্করণ উপস্থাপিত হয়েছে। সমাজের মানুষ একে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং গ্রহণ করেছে। নিঃসন্দেহে চিন্তাশীল পাঠকগণ এর থেকে উপকৃত হবেন।

info বইয়ের বিস্তারিত তথ্য
edit
লেখক:মহর্ষি পতঞ্জলি
book
প্রকাশনী:বিজয়কুমার গোবিন্দরাম হাসানন্দ
calendar_month
প্রকাশকাল:২০১৫ খ্রিষ্টাব্দ
wysiwyg
পৃষ্ঠা সংখ্যা:৪৬৫
translate
ভাষা:হিন্দি
description
ফরম্যাট:PDF
save
ফাইল সাইজ:২১.৮ MB

downloadডাউনলোড করুন

আপনার পছন্দের ফরম্যাটে বইটি ডাউনলোড করতে নিচের বাটনে ক্লিক করুন:

(ডাউনলোড লিঙ্ক কাজ না করলে বা কোনো সমস্যা হলে অনুগ্রহ করে মন্তব্য করুন।)